বৃহৎ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
-মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু, প্রতিমন্ত্রী
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়
সাভার (ঢাকা) ২৬ জানুয়ারি, ২০২০
প্রাণিসম্পদ কৃষি অর্থনীতি নির্ভর বাংলাদেশে অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি খাত, এ খাতের উন্নয়নের জন্য গবেষণা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। জাতীয় প্রয়োজনে নব নব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) কর্তৃক আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘‘বার্ষিক রিসার্চ রিভিউ ওয়ার্কশপ-২০১৯’’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জনাব মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু, এম পি, এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন , আমরা মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও মাংস, ডিম এবং দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি নাই। আমাদের গ্রামের বৃহৎ জনগোষ্ঠী ও প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের মাথাপিছু প্রাণিজ আমিষের চাহিদা এখনও পূরণ হয় নাই। গবেষণার মাধ্যমে উন্নত জাতের গাভী, ষাঁড়, ছাগল, ভেড়া এবং মুরগির উদ্ভাবন করে সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দিতে হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ ফলে এখন মাছ আমদানি বন্ধ হয়েছে। তবে সীমিত আকারে মাংস আমদানি হচ্ছে। এক্ষেত্রে মাংস উৎপাদন বন্ধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি, আমাদের উৎপাদন আরও বাড়লে মাংস উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. নাথু রাম সরকার এর সভাপতিত্বে দুই দিন ব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব রওনক মাহমুদ, সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, জনাব মোঃ জাকির হোসেন আকন্দ, সদস্য (সচিব), কৃষি, পানি ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, জনাব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, অতিরিক্তি সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ আবদুল জব্বার শিকদার, মহাপরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
জনাব রওনক মাহমুদ, সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলেন, বিএলআরআই হল দেশের প্রাণী ও পোল্ট্রিসম্পদ উন্নয়নে একটি জাতীয় গবেষণা ইনস্টিটিউট। বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য প্রাণিসম্পদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আপনাদের সুপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এ মন্ত্রণালয় যাবতীয় সহায়তা প্রদানে সদা প্রস্তুত। বিএলআরআই বিজ্ঞানীবৃন্দকে গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের আহবান জানিয়ে বলেন, যদি মানসম্পন্ন একটি উদ্ভাবনও হয় তাহলে সে উদ্ভাবনই প্রাণিসম্পদের চেহারা পরিবর্তন করে দিতে পারে।
জনাব মোঃ জাকির হোসেন আকন্দ, সদস্য (সচিব), কৃষি, পানি ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, বলেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও প্রাণিজ আমিষের চাহিদা এখনো ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে দাড়াতে হলে প্রাণিসম্পদের গবেষণা খাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে, এক্ষেত্রে বিএলআরআই বিজ্ঞানীদের অবদান রাখতে হবে।
সম্মানিত অতিথির ভাষনে, ডাঃ আবদুল জব্বার শিকদার , মহাপরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলেন,বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। ইতোমধ্যে বিএলআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত বেশ কিছু প্রযুক্তি আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে যা আমরা মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করছি।
সভাপতির ভাষণে ড. নাথু রাম সরকার বলেন, স্বল্প জায়গায় অধিক নিরাপদ আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে অঞ্চল ভিত্তিক সমস্যা নিরুপণ করে নতুন নতুন গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে যা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত জরুরী ও প্রয়োজনীয়। দুইদিন ব্যাপী কর্মশালায় আমরা ৬৬ টি গবেষণা প্রবন্ধের মধ্যে ৩৪ টি উপস্থাপন করা হবে এবং ৩২ টি পোস্টারের মাধ্যমে প্রদর্শিত হবে। দুইদিন ব্যাপী কর্মশালায় দেশের পোল্ট্রি ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে অংশ গ্রহণকারিদের পরামর্শে গবেষণা কার্যক্রম আরো ফলপ্রসু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন । অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত পরিচালক জনাব মোঃ আজহারুল আমিন। দুইদিন ব্যাপী কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার শিক্ষক, বিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।